সংবাদচর্চা রির্পোট
দু’দিন ধরেই নানা দিক থেকে দাবি উঠেছে লক ডাউনের। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নগর এলাকায় কারফিউ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেছেন। একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেছেন, দ্রুত গোটা নারায়ণগঞ্জ লকডাউন করার জন্য। তবে শেষতক সদর উপজেলার ৩টি থানাকে লকডাউন ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গতকাল রাতে তা নিশ্চিত করেছেন। আর লকডাউনের সময়ে যদি কেউ বিনা কারনে বের হয় তবে তাকে আইনের আওতায় নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।
জানা গেছে, ৩০ মার্চ বন্দর রসুলবাগ এলাকার বাসিন্দা এক নারী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। পরে আইইডিসিআর ওই নারীর নমুনা সংগ্রহ করলে ২ এপ্রিল করোনাভাইরাস পজিটিভ আসে। এ ঘটনায় রসুলবাগ এলাকা লকডাউন করে প্রশাসন। এখানে শতাধিক পরিবার লকডাউন রয়েছে। এছাড়া তার সংস্পর্শে আসায় এক চিকিৎসক, নার্স ওয়ার্ডবয়, ল্যাব টেকনিকশিয়ান এবং ওই নারীর আত্মীয় সজনসহ তাকে গোসল করানো দুই নারী নিয়ে মোট ৪১ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এরমধ্যে ওয়ার্ডবয় রয়েছেন আইসোলেশনে।
অপর দিকে বন্দরে ওই নারী মৃত্যু আগের দিন শহরের পাইকপাড়া যান। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রশাসন পাইকপাড়া এলাকায় ওই নারীর ভাতিজাসহ ৮ নিকট আত্মীয়কে হোম কোয়ারেন্টাইনের থাকতে বলেছেন। একই সাথে ওই এলাকার গলিটিও লকডাউন করা হয়।
অন্যদিকে শহরের এক নং বাবুরাইল এলাকায় ফয়সাল সুজন নামে এক ব্যবসায়ী মারা যান ৩ এপ্রিল রাতে। এ ঘটনায় ওই পরিবারের আটজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত চিকিৎসকের শহরের চাষাড়ার একটি বহুতল বেইলি ভবনের একটি ফ্ল্যাটের দুজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। পাইপাড়া
শহরের ২ নম্বর গেট পুরাতন পালপাড়া এলাকায় এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় প্রবেশের দুই পথ বন্ধ করে লকডাউন করে দিয়েছেন এলাকাবাসী।
৪ এপ্রিল সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার কাশীপর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুচিন্তানগর এলাকার এক বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে রাতে সদর ইউএনও ওই এলাকার ৩শ পরিবারকে লকডাউন ঘোষণা করেন। একই সাথে সেই এলাকাও লকডাউন করে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে ১২ জনকে।
৫ এপ্রিল শহরের নন্দিপাড়া এলাকার ৫ শতাধিক পরিবারকে লকডাউন করে দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সদস্যরা। এ সময় তাদের এলাকার কাউকে ঘর থেকে বের না হতে এবং বাইরে থেকে কাউকে ঘরে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আফসানা আফরোজ বিভা ও প্রধান স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা শেখ মোস্তফা আলীর নেতৃত্বে ওই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এসব কারনে গতকাল নারায়ণগঞ্জ সিটি মেয়র, কয়েকজন কাউন্সিলর, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন লকডাউনের কথা বলেন। গতকাল বিকেল থেকে এ দাবি আরও জোরালো হয়। পরে রাতে সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলা প্রশাসন ৩ থানাকে লকাডাউন ঘোষণা করেন।
এর আগে জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, জেলা প্রশাসন মো. জসিম উদ্দিন, পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, সিভিল সার্জন ডা. ইমাতিয়াজ আহমেদ সহ বিভিন্ন দফতরের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ সেলিম রেজা রোববার রাত ১১ টায় মুঠো ফোনে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার তিন থানা লকডাউন করা হয়েছে। সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানাা আওতায় যেসব এলাকা রয়েছে তা লকডাউন করা হয়েছে। তবে বন্দর লকডাউনের আওতার বাইরে থাকবে বলে জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানান, সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় কোন যানবাহন চলাচল করবে না। বিনা কারনে কেউ ঘর থেকে বাইরে আসতে পারবে না। যারা এই নির্দেশনা না মানবেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা জবে বলে জানান।